"You may say I'm a dreamer, but I'm not the only one"

Welcome to the world of a dreamer...a person who is heavily influenced by music, a person who loves looking at things with a simplistic outlook. I am a big fan of The Beatles.

About Me

My photo
I am a dreamer, procrastinator, last-minute worker. Music is my passion--I am an obsessive music collector. Often I collect gigabytes of music only with the hope to listen to'em "someday". I like writing, reading, and I also cherish to learn to play the guitar someday...

Saturday, June 08, 2019

ইদের স্মৃতি

আর্টারি ব্লক হয়, রাস্তা ব্লক হয়, কদাচ দূর্ভাগ্যবশত প্রোফাইল থেকেও ব্লক হতে হয়। কিন্তু আরেক ধরণের ব্লক আছে, যেটা আমাকে মাঝে মাঝেই ঘায়েল করে, যা হচ্ছে "রাইটার্স ব্লক" নামক একখানা শৌখিন ব্যাধি! মূলত একজন নিয়মিত লেখক যখন বহুদিন ধরে নতুন কিছু লিখতে পারে না, তখন বলা হয়ে থাকে যে সে লেখনীর জড়তায় আক্রান্ত। 

আপাতঃদৃষ্টিতে এটি এক ধরণের ফাইজলামি বা বিলাসিতা মনে হলেও ব্যাপারটা সত্য। হয়তোবা প্রকৃত ও গুণী লেখকেরা এ ব্যাপারটাকে অগ্রাহ্য করতে পারে, কিন্তু আমি পারি না। কিছুদিন আগে একটা গল্প লেখা শুরু করেছিলাম। প্রথম পর্বের পর তাড়াহুড়া করে দ্বিতীয় পর্ব লেখার পর থেকেই আমি ধরা। কলম বা কিবোর্ড, কোনটাই চলে না। 

এর মাঝে পরিকল্পনা হল ইদের স্মৃতি নিয়ে গ্রুপে একটি লিখিয়ে ইভেন্ট হবে। আমিই ঘোষণাটা দিলাম। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, কলম আর চলে না। আজকে সব ধোঁয়াশা কে খোদা হাফেজ দিয়ে শুরু করলাম। ভরসা রাখুন, আমি জনৈক বিশ্ববিখ্যাত গায়কের নাচ ও গানের ইদ অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রাণিত হই নাই। 

ছোটবেলার ইদ এর বড় অংশ ছিল চাচাতো ও ফুফাতো ভাইরা মিলে নামাজ পড়তে যাওয়া। রোজার ইদের কথা বলছি। আমার দাদার কবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে অবস্থিত। এজন্য প্রতি বছর আমরা নামাজ পড়তে ওখানেই যেতাম। মাঝে মাঝে দাদার কবর জিয়ারত শেষে জাতীয় কবির কবরটাও জিয়ারত করা হোত। 

(এখন আর এই কবরস্থানে প্রবেশ করা যায় না। গঞ্জিকা সেবক এবং অশ্লীল প্রেমিক প্রেমিকাদের অত্যাচারে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা এখন মসজিদের ভেতর থেকেই দোয়া পড়ি। দাদার কবরটা দূর থেকে আবছা দেখা যায়।)

নামাজ শেষে কবরের সামনে দাড়িয়ে দোয়া ও মোনাজাত শেষে এলিফেন্ট রোডে আমার আব্বার ফুফুর বাসায় যাওয়া হোত। উনারাও যৌথ পরিবার, সেখানে আব্বা ও চাচারা তাদের কাজিন দের খুঁজে পেতেন। আমরাও আরো কিছু কাজিন খুঁজে পেতাম। সবার সাথে দেখা করে, কোলাকুলি করে এবং মুরুব্বিদের কে সালাম করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায়শই ১২-১ টা বেজে যেতো। 

বাসায় ঢুকেই প্রথম কাজ ছিল দাদীর পায়ে ধরে সালাম করা, এবং ১০০ টাকার কড়কড়ে নোটে সালামি প্রাপ্তি। উনি চাচাদেরকে দিয়ে আগেই অনেকগুলো নতুন নোট আনিয়ে রাখতেন। বোধবুদ্ধি হবার পর থেকেই এ ব্যাপারটা দেখে এসেছি। সবাই পেত, কেউ কমও না, কেউ, বেশিও না। আমার আম্মাকেও উনি একই পরিমাণ টাকা সালামি দিতেন--নিতে না চাইলেও জোর করে দিতেন। 

২০০০ সাল। 

ইদের নামাজ পড়েই সেবার বাসায় চলে আসলাম, খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে। বাসায় এসে দৌড়ে গেলাম দাদীর ঘরে। সালাম করতে হবে সবার আগে। বোকা হয়ে গেলাম। 

রুমের সামনের গোলাপী গোলাপী পর্দাটা ঠিকমতই ছিল। বিছানায় সবুজ চাদরটাও যেভাবে থাকতো সবসময়, সেভাবেই রাখা ছিল। চেষ্ট অফ ড্রয়ারের উপর পানের বাটা আর সুপারী কাটার যন্ত্রটাও চকচকে। কাঠের আলমারীর উপরে কুরআন শরীফ আর তসবিহ। বিছানার পাশে লাল গদিওয়ালা বেতের সোফাটায় এক রত্তি ধুলাও নেই। দরজার চিপায় তেলের ড্রামের অর্ধেক খোলা ঢাকনা দিয়ে ভাতের চাল দেখা যাচ্ছে। স্টিলের আলমারীতে চাবি লাগানো। মনে হচ্ছে এই বুঝি দাদী ঢুকবেন ঘরে। 

হঠাৎ মনে পড়লো। দাদী ঠিক এক মাস আগে এই ঘর থেকেই বের হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সামান্য এক উপসর্গ নিয়ে । সেই সামান্য উপসর্গ কিভাবে তিন দিনের মাথায় প্রাণঘাতী স্ট্রোকে রুপান্তরিত হলো, তার ব্যখা আজও খুঁজে পাই না। শুধু জানি যে কিছু অকর্মণ্য ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছিলেন তিনি। 

যৌথ পরিবারে আমি পাথরসম মানুষ হিসেবে পরিচিত। জীবনে আবেগের স্থান খুব একটা ছিল না তখন। এখনো আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু সেদিন নিরবে দাদীর ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে এসে অনেক ক্ষণ কেদেছিলাম। নিজেকে খালি প্রতারিত মনে হচ্ছিল।  

দাদী কে যখন কবর দেয়া হচ্ছিল, তখনো আমার চোখ দিয়ে এক ফোটাও অশ্রু নামেনি। যখন মারা গেলেন, তখন রাগ উঠেছিল বিশ্বব্রক্ষান্ডের উপর, কিন্তু শোক টের পাইনি। যারা হাউমাউ করে কাঁদছিল, তাদের উপরও রাগ উঠে যাচ্ছিল। খালি মনে হচ্ছিল প্রতিদিনই তো কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে, এই ব্যাপারটা নিয়ে এত উত্তেজিত হবার কি আছে? 

ঠিক এক মাস পরে,  ইদের নামাজের পর দাদী কে সালাম করতে না পেরেই প্রথমবারের মত উনার অভাবটা টের পেলাম। জমে থাকা শোক বের হয়ে এলো। সেই ছিল আমার প্রথম কোন আপনজনের মৃত্যু দেখা। 

এরপর বছর দুয়েক পর চাকরী শুরু করলাম। "ছেলে মানুষ" হয়ে গেলাম। চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেলো চিরতরে। অসংখ্য মানুষ কে কবর দিলাম বছরের পর বছর। খুব কম সময়ের মধ্যেই আমাদেরকে ছেড়ে গেলেন আমার বড় চাচা আর বড় ফুফা। এখন ইদের নামাজের পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে যাই দাদীর কবর জিয়ার করতে। ২০০০ আসালে শুধু দাদী ছিলেন, এখন উনার আশে পাশেই শুয়ে আছেন আরো পাঁচ জন প্রয়াত মুরুব্বী। 

এই লেখাটা লিখার সময় এক টুকরা বেয়াদব অশ্রু চোখের কোণায় স্থান নিয়েছিল। অনেক্ষণ কম আলোয়, ল্যাপটপের স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে আছি বিধায় তার আগমন--নিজেকে এই মাত্র বোঝালাম। 

ব্যাটা মানুষের আবার কান্না কিসের?


No comments: