
My rating: 5 of 5 stars
আজকাল পরিবেশ পরিস্থিতি আর আমাদের জীবনযাপনের ধারা এমন হয়েছে, যে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হয় এরকম বই (বস্তুত: নন ফিকশন) পড়া খুবই দুষ্কর—প্রায় অসম্ভব বললেও কম বলা হবে না। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন কয়েক পাতা হলেও পড়ার চেষ্টা করি। গল্পের বই হলেও পড়ি।
সম্প্রতি ৫১ পাতার ‘ডোপামিন ডিটক্স’ নামের একটি বই পড়ে শেষ করলাম।
মূলত, ডোপামিন হচ্ছে একধরনের হরমোন, যা আমাদের মস্তিষ্কে আনন্দ ও উৎসাহের অনুভূতি এনে দেয়। কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ করলে ব্রেইনে এটি তৈরি হয় এবং আমরা আনন্দ পাই; সে কাজটি চালিয়ে যেতেও উৎসাহ পাই।
বইয়ের প্রস্তাবনা হল, অতিরিক্ত ডোপামিনের খোঁজে আমাদের মন-মানসিকতায় একধরনের বিষাক্ততা (টক্সিসিটি) তৈরি হয়। যার ফলে, আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো না করে খালি ডোপামিন নিঃসরণ হয়, এরকম কাজে ব্যস্ত থাকি। অথবা অন্যভাবে, প্রকৃত 'অর্জন' থেকে ডোপামিন সংগ্রহ না করে আমরা 'সময় নষ্ট' হয় এবং আদতে আমাদের জীবনে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখে না, এরকম কাজ থেকে ডোপামিন সংগ্রহ করতে থাকি।
উদাহরণ স্বরূপ, ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসে কাজ না করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইউটিউব দেখে পার করে দেওয়া। কাজের ফাঁকে বারবার ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করা, ইমেইল চেক করা—নতুন কোনো নোটিফিকেশন এলে সেটাতে ক্লিক করে ১০-১৫ মিনিট থেকে শুরু করে ঘণ্টা দুয়েক পার করে দেওয়া, ইত্যাদি।
লেখকের মতে, আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণের পরিমাণ কোনো কিছুতে বদলাচ্ছে না, কিন্তু আমাদের এই বিভিন্ন ধরনের আসক্তির কারণে অনেক ‘বিনোদনমূলক’ কাজ অনেক বেশি করে একই পরিমাণ (যা আমাদের প্রয়োজন) ডোপামিন উৎপাদন করতে হচ্ছে, যে কারণে কাজের সময়টা কমে যাচ্ছে।
এ অবস্থা নিরসনে ফরাসি লেখক থিবো মেরিস তার বইয়ে ৩ ধরনের ডিটক্সের কথা বলেছেন। ৪৮ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা ও সাময়িক—এ তিন ধরনের কৌশলের বর্ণনা আছে সেখানে।
তাত্ত্বিকভাবে তার লেখনী বেশ চিত্তাকর্ষক। তিনি বলেছেন, যেহেতু আমরা সবাই মোটামুটি মোবাইল ফোন, পিসি অথবা টিভিতে আসক্ত—৪৮ ঘণ্টা এগুলো থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে। এছাড়াও চিনিযুক্ত ও প্রোসেস করা খাবার, অতিরিক্ত ব্যায়াম, দুঃচিন্তা, এমন কী বেশি কথা বলতেও বারণ করেছেন তিনি। কিছুটা ‘সন্ন্যাস’ নেওয়ার মতো ব্যাপার স্যাপার। তার লেখা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার ‘ডোপামিন ডিটক্স’ হবে এবং আপনার কর্মক্ষমতা, উপযোগিতা ও জীবন যাত্রার মানে আসবে উল্লেখযোগ্য উন্নতি; এমনটাই দাবি করেছেন থিবো। তবে আদতে আমাদের ব্যস্ত জীবনে মোবাইল, ইন্টারনেট ছাড়া ৪৮ ঘণ্টা তো দূরে থাক, না ঘুমিয়ে ৪৮ ঘণ্টা পার করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে!
তবে যারা ভ্রমণ করেন, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান, তারা হয়তো এটা পারেন।
বইটা পড়ে ভালো লেগেছে। এ সিরিজের আরও ৩টি বই আছে, হয়তো সেগুলোও পড়া হবে। তবে এসব কৌশল কাজে লাগানোর বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক গল্প।
তারপরও রিভিউ করতে বললে আমি ৮/১০ দিব, কারণ বিষয়বস্তুতে নতুনত্ব আছে, ভাষা খুবই সাবলীল এবং খুব সহজেই পড়ে ফেলা যায়।
View all my reviews
No comments:
Post a Comment